২০ বছর পর ফেলে আসা চেয়ার ফেরৎ পেলেন ছোড়দা’ সোমেন মিত্র,



মমতাকে জোটের বার্তা কংগ্রেসের


কল্যাণ অধিকারী, স্টিং নিউজ করেসপনডেন্ট 

দেশে ক্রমশ বিদীর্ণ কংগ্রেস। দেশজুড়ে তাঁদের সাংসদের সংখ্যা কমেই চলেছে। কেন্দ্র থেকে বিজেপি কে হাটাতে ১৯ এর আগে জোট গড়তে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কে পাশে রাখাটা বড্ড দরকার। এমত সময় সেই পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে নরমে রাখার জন্য অধীর চৌধুরী কে প্রদেশ সভাপতির চেয়ার থেকে সরিয়ে কম ওজনের ক্যাম্পেন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কংগ্রেসে একসময় ফেলে যাওয়া চেয়ারকে ফেরৎ দেওয়া হল ছোড়দা’ তথা সোমেন মিত্রকে।

সময়টা ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাস। দিল্লির জাতীয় কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে খোঁজ শুরু পশ্চিমবঙ্গের জন্য একজন পোক্ত দলীয় নেতা। যার ক্ষমতার উপর ভর করে দল এগিয়ে যাবে লক্ষ্যের দিকে। থাকবে না গোষ্ঠী কোন্দল। হাতে হাত ধরে কাজ করবে প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সি, মৌসম বেনজির নূর, আবদুল মান্নান, মানস ভুঁইয়া সহ কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা নেত্রী। 

২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী কে করা হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর তীব্র বিরোধী বলেই সর্বজনবিদিত। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে একক ভাবে লড়াই করে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস। সোমেন মিত্র ও চৌরঙ্গী কেন্দ্রের বিধায়ক স্ত্রী শিখা মিত্র তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে ফিরে যায় পুরনো দল জাতীয় কংগ্রেসে। বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোটের কান্ডারী হয়ে লড়েছেন চৌরঙ্গী কেন্দ্র থেকে হেরেওছেন বিপুল ভোটে।

এবার সেই ছোড়দা’ সোমেন মিত্র ২০ বছর আগে কংগ্রেসে ফেলে আসা প্রদেশ সভাপতির চেয়ার ফেরৎ পেলেন। সরিয়ে দেওয়া হল মমতার কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে। তবে শরীর খুব একটা ভালো নয়। মার্চ মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি হন সোমেন মিত্র। বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট তার আগে কংগ্রেস এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন? প্রদেশ সভাপতি থেকে অধীরকে সরানো মধ্য দিয়ে ১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে একপ্রকার মমতাকে বিরোধী জোটে স্বাগত জানালো কংগ্রেস। এমনটাই ধারনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দের একাংশের। 

অন্যমত বলছে, প্রদেশ সভাপতি থাকাকালীন একাধিক ঔদ্ধত্যর পরিচয় রেখেছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর সময় রাজ্যে কংগ্রেস আরও বেশি দুর্বল হয়েছে। একাধিক নেতা বাধ্য হয়ে শাসক দল তৃণমূলে নাম লিখিয়েছে। দলবদল করে যাওয়া প্রবীণ মানস ভুঁইয়াকে 'গোডাউনের গেটকিপার' বলেও কটাক্ষ করেছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর বিপরীত মেরুতে ছিলেন আবদুল মান্নান। যে কারণে কোন মিটিং মিছিলে একত্রে পাওয়া যেত না। সোনিয়া গান্ধী বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যখন বৈঠক করছেন তখনো মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস বিধায়ক দের বলেন যান দিল্লিতে জেনে আসুন আগে। 

দিনান্তে ঢলতে থাকা সূর্য কে সাক্ষ্য করে আবারও ফেলে যাওয়া চেয়ারে বসতে চলেছেন সোমেন মিত্র তথা 'ছোড়দা'। সূত্রের খবর ইতিমধ্যে সোমেনকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় জোটের বার্তা দিয়েছেন। সামনের বছর ব্রিগেডে সোনিয়া গান্ধী কে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছে ঘাসফুল। ১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে আঞ্চলিক দল হিসাবে ও বিরোধী জোটের মুখ্য ভূমিকা নেওয়া তৃণমূল কে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রাথমিক কাজটা সেরে রাখলো দিল্লির জাতীয় কংগ্রেস।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য