শুধু ছেদনের সময় শেষ হুংকার দিয়ে আছড়ে পরেছিল


|🌳যশোর রোডের ওই শতায়ু প্রাচীন গাছ আটকায় বিশ্ব উষ্ণায়ন🌳|

-কল্যাণ অধিকারী

দেশভক্তি যদি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে থাকে তবে আবেগ যশোর রোডে শিরিষ, মেহগনি ও অশ্বথ গাছ। কুঠার হাতে ওই মানুষগুলো যখন গাছগুলো কে কাটছে অমানবিকতা বললেও কম বলা হয়। কতটা ওরা নিষ্ঠুর ভাবলে ঘৃণা হয়।

আমি ওই রোড ধরে কোন কালেই যাতায়াত করিনি তা নয় পেট্রাপোল যাবার সূত্রে পরিচয় ঘটেছে। গাছ ছেদনের চিত্র বিচিত্র মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুবার ছবি দেখিছি। কুঠার ধরা লোকেদের যারা নির্দেশ দিয়েছে, তাঁদেরও জন্মের পূর্বেকার গাছ। শুধু যে ইতিহাসকে আকড়ে রয়েছে গাছগুলো তা নয় বিশ্ব উষ্ণায়ন কে অনেকটা রদ করছে।

জানা গেছে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬১ কিমি রাস্তা সম্প্রসারণ হোক। খুব ভালো কথা। কিন্তু ওর ফাঁকে যে ফ্যাকাসে হয়ে যাবে গোটা ইতিহাস তার বেলায় কি!  স্যর বলবেন একটু ! চারতলা উঁচু বিশালাকার গাছগুলো ছেদন করে ফেলার আগে তাদের বয়সের কথা ভাবা হবে না কেন?

বয়স নেহাতী কম নয় দেড়শো - দুশো বছর বয়সী। অন্য কোন উপায় কি ভেবে দেখা যায় না। তিস্তার পানির জন্য ইলিশ আসে না এপারে। তবুও লড়াই থেকে পিছপা হয়নি এ রাজ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন এত কেন্দ্রের জোরাজুরি! হাই কোর্ট - সুপ্রিম কোর্ট সবি হচ্ছে শুধুমাত্র ওই কথা না বলতে পারা গাছগুলোর বার্ধক্য বয়সে ফাঁসির সাজা রদের জন্য। ওদের কষ্ট ছাত্রছাত্রীরা বুঝেই পথে নেমে পড়ে সেদিন। যোগ্য সঙ্গত দেয় বাকিরা।

মোট হাজার চারেক গাছ থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন'শর কিছু বেশি গাছের ফাঁসি হবার কথা ছিল। যা রদ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে এ সিদ্ধান্তের আগে পঞ্চাশের বেশি শতাব্দী প্রাচীন গাছের ফাঁসি হয়েও গিয়েছে। পড়ে রয়েছে দেহাংশ। কষ্ট হয় বৈকি। ওরা তো কথা বলতে পারে না। শুধু ছেদনের সময় শেষ হুংকার দিয়ে আছড়ে পরেছিল।

পড়শি দেশের সঙ্গে বজায় রাখতে হবে উন্নয়নের সখ্যতা। চওড়া করতে হবে রাস্তা। বিকল্প না ভেবে ফাঁসির ফাইলে সই করে দেওয়াও হল। বাকিটা লড়াই। গলার শিরা উঁচিয়ে, গাছকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে ওরা। বাকিটা একটা আস্ত আন্দোলন। এমন আন্দোলন লেনিন স্তালিন মাও হয়ে নয় একটা সমগ্র জাতির কথা ভেবে। আর সে জাতির নাম মনুষ্য জাতি। যা প্রতিনিয়ত বেইমানী করে। ঠকিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে চায়।

এক নয় দুই শতায়ু প্রাচীন গাছকেও ফাঁসি তে লটকাতে হাত কাঁপে না এমন মনুষ্য দের জানাই ধিক্কার। বুক চিতিয়ে লড়াই, শিরা উঁচিয়ে আন্দোলন, গাছ জড়িয়ে ফাঁসি রুখে দেওয়া আন্দোলন কে পূর্ণ সমর্থন জানাই। পাশে আছি।

©-কল্যাণ অধিকারী

চিত্র প্রকাশিত কিছু পত্র পত্রিকা থেকে নেওয়া। 

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য