বুধবার বনধ কতটা রাজনৈতিক লাভ ও ক্ষতি


লোকসভা ভোটের আগে বুধবারের বিজেপির বনধ রুখতে প্রেস্টিজ লড়াইয়ে রাজ্য সরকার

কল্যাণ অধিকারী

রাজ্যে বনধ ঘিরে সম্মুখ সমরে দুই প্রতিদ্বন্দী। বছর কয়েক আগেও শাসকের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বামেরা। এখন অবশ্য বামেরা অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেদের সরিয়ে গেরুয়া রাম। সেই গেরুয়া শিবিরের ডাকে বুধবার বারো ঘন্টার বাংলা বনধ। তা রুখতে প্রবল শক্তি নিয়ে বনধের বিরোধীতা করবে শাসক দল ও রাজ্য সরকার এটাই সর্বত্র কানাঘুষো।

উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরে দাড়িভিট হাইস্কুলে উর্দু শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে বিবাদ বাঁধে। পরে সেই বিবাদ তুমুল সংঘর্ষের আকার নেয়। মৃত্যু হয় দুই প্রাক্তন ছাত্রের৷ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাজ্য জুড়ে বারো ঘন্টার বনধ ডাকে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী সব সময় বনধ হরতালের বিরুদ্ধে। তবে এবার ডেকেছে বর্তমান প্রতিদ্বন্দী বিজেপি। লড়াইয়ের থেকে বড় প্রেস্টিজ ফাইট।

কেন্দ্রে একাধিক সিদ্ধান্তের লাগাতার প্রতিবাদ করছেন তৃণমূল নেত্রী। নিয়ম করে বেড়ে চলেছে জ্বালানির দাম। মধ্যবিত্তের কথা ভেবে পেট্রোল ডিজেলের বাড়তে থাকা দামের উপর এক টাকা কম করেছেন। রাজ্য সরকারি কর্মীদের ছুটির সংখ্যা বাড়িয়েছেন। তবে বনধে কামাই করলেই রাফ এন্ড টাফ। হাজিরা ওইদিন বাধ্যতামূলক। পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন বুধবার বনধে অতিরিক্ত ৫০০ সরকারি বাস পথে নামবে। থাকবে জল যানের সংখ্যাও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। 

প্রশ্ন বনধের বিরুদ্ধে এতটা কঠোর কেন রাজ্য সরকার? 

মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন, বামেদের নেওয়া ঋণের টাকা শোধ করতে হচ্ছে 'মা মাটি মানুষের' সরকারকে। শুনলে গাঁক করে ওঠার জোগাড়। রাজ্যকে বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা গুনাগার দিতে হচ্ছে অন্ততপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী এমনটাই দাবি করে আসছেন। রাজ্যের লক্ষ্মী ভান্ডারে রাজস্ব ভাঁড়ে মা ভবানী তার উপর রাজ্যজুড়ে একদিন বনধ ডাকলে কল-কারখানার ঝাঁপ বন্ধ থাকবে সেক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টপকে যাবে। তবে এরপরেও থাকছে শিল্পপতিদের সামনে রাজ্যের অবস্থান। বনধ নিয়ে কোনভাবে বিরূপ প্রভাব পড়লে হাতছাড়া হতে পারে শিল্পে লগ্নির বড় সুযোগ। 

এছাড়াও বনধ রুকে দিতে পারলে থাকছে রাজনৈতিক ফায়দা। বছর ঘুরলেই দেশজুড়ে লোকসভা ভোট। তার আগে রাজ্যে এক ইঞ্চি রাজনৈতিক জমি ছাড়তে চাইবেন না বিজেপি কে। বিভিন্ন জনসভায় ৪২ টি সিট দখলের কথা বলে আসছেন। যদি তেমনটি সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর দাবি জমাটি হবে। ফলে বুধবার বনধে রাজ্য সচল রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে অল আউট লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও শাসকদল।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য