তোমার দু'চোখের পাতা ভিজিয়ে দেবে আমার চোখ ভেজা জল
| ওঠো হেমতাজ আসছে পার্বতী |
-কল্যাণ অধিকারী
ওঠো হেমতাজ ওঠো,,,
দেখো ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। ক'দিন পরেই পার্বতী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পৌঁছাবে। গোছগাছ শেষের দিকে। ন্যাতা দেওয়া দেয়ালে মা-জেঠিমা এবার আলপনা টানা শুরু করবে।
হেমতাজ তুমি ঘুমবে না কবরে। দীপ্ত হয়ে তাকিয়ে থেকো। তোমার দু'চোখের পাতা ভিজিয়ে দেবে আমার চোখ ভেজা জল। প্রতিরাতে তোমার কথা ভেবে আজও শরীর উষ্ণতায় জেগে ওঠে।
হেমতাজ!
হেমতাজ! আমি তোমার প্রেমিকা।
ওড়না দেওয়া বুকে আজও বের হই রাস্তায়। ভয় আর হয় না। এখন তো তুমি আগাপাশতলা থাকো। হাত ধরে নিয়ে চলো কলেজের কমন রুমে। পিপাসায় জিভ আড়ষ্ঠ হয়ে উঠলে জলের বোতলের ছিপি খুলে ধরো। তবুও রাতে ওই বকাটে গুলো হাত বাড়িয়ে ওড়না টানতে চায়। বুকটা ধড়াস করে ওঠে।
হেমতাজ তুমি আমায় একলা রেখে কবরে শুয়েছ। তাকিয়ে দেখো কপালের টিপ, চোখের পাতার মাশকারা, হাতের নেলপলিশ, সব মুছে এখন আমি বিধবা প্রেমিকা। সে রাতে দুই উরু যখন টানটান হয়ে ওঠে। গরম নিঃশ্বাস পড়ে ঘনঘন। খুঁজতে থাকে বিছানায় তোমার তামাটে শরীর। ছোবলা তে চায় দুই অষ্টাঙ্গ। পুরনো বেড কভারে তোমার গন্ধটা নাকে মেখে খোলা চুলে রাত কাবার করি। শত হোক প্রাপ্ত হয়েছি কবরে ঢাকা তোমার শরীর থেকে।
হেমতাজ শুনতে পাচ্ছ আগমনীর সুর। ভেজা দূর্বায় বিছিয়েছে শিউলি তার শরীর। ভোরের আকাশে টেনেছে কুয়াশার রেখা। দুর্গা দালানে মাটির কাঠামোতে পরছে রঙের প্রলেপ। আজও খুশির দিনে তোমায় খুঁজি সেই মন্দ দিনের মতই। হয়ত অভিমানী হয়ে থেকে গেছি। হ্যাঁ হেমতাজ আমি সেই প্রেমিকা যার পাশে তুমি ছিলে গোলাপী রঙা জামা আর কোমরে লাগানো ঘুমশি পরে। মাঝেমধ্যে কবরের ডাক শুনতে পাই ঝিঁ ঝিঁ ডাকের ভিড়ে।
তখন, একছুটে পৌঁছে যাই হেমতাজ তোমার কবরের ভেজা মাটি সরিয়ে শুধু একটিবার তোমাকে দেখতে চাই। হেমতাজ শুধু তোমাকে।
হেমতাজ, তুমি আমার প্রাক্তন ভাগীরথী, তুমি আমার একালের ব্রম্মপুত্র। সমাজের চোখে তুমি মৃত আর আমি ইস্তাম্বুলের মাঝে ধরে রেখেছি তোমার কন্ঠস্বর। দ্বিপ্রহরে নাভিপদ্মের মাঝে খুঁজে ফিরি সহানুভূতির চিঠি। বন্দুকের নল ছিটকে বেরিয়ে আসা বারুদের গন্ধ জবাব চায়। কবরে শুয়ে হেমতাজ বিচার চাইছে। বড় বিচার। মায়ের বৈকুন্ঠপুরের বিচার। প্রেমিকার লাজুক দৃষ্টি তে কালির দোয়াত ঢালা বিচার।
©-কল্যাণ অধিকারী
Comments
Post a Comment