শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।
চারটি রাতের গপ্পো লিখে মা চললেন শ্বশুর ঘরে
-কল্যাণ অধিকারী
মা, পিছুটানে আমায় বেঁধে দিও না। গায়ে শ্মশানের ছাইপাঁশ মেখে ও কোথায় রয়েছে জানিনা। এই কটাদিন কি খেয়েছে, রাতে কখন ঘুমিয়েছে বুঝতে পারছি না। আমাকে শ্বশুর ঘরে ফিরতে হবে মা। তাছাড়া কাল একাদশী এয়ো-স্ত্রী দের বাপের ঘরে থাকতে নেই তো বলো।
লক্ষ্মী, সরস্বতী বলছে কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যাবে। তুমি বলো মা ওরা তো বড়ো হয়েছে স্বামী কি আমায় অত টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে! পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে, খাল-বিল, নদী-নালা পেরিয়ে এসেছি। খাবার বলতে পাহাড়ের বরফ, নদীর জল, বিলের শালুক। ফিরে যাব ওই একি পথ ধরে। তবে মা, মনটা বড্ড খারাপ গো। মেয়ে দু'টোর জন্য। ওরা বড্ড ভালো যে। বাবার কথা খুব শোনে। বীণা'র তার সরস্বতী নিজে ঠিক করে এনেছে। তবুও বলেনি নতুন এনে দিতে।
এ বছর আশ্বিন-কার্তিক দুই মাস মিলিয়ে কাটিয়ে গেলাম চারটি দিন। মানুষের কত আহ্লাদ, আনন্দ, খুশি বিনিময়, সেলফি বিনোদন, সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় ভরা আমার পরিবারের ছবি। পঞ্জিকা মেনে এবারে ঘোড়ায় ছিল আগমন। শ্রীভূমি ওরা তো কার্তিককে ঘোড়ায় চাপিয়েছে। তাতে আর কি? শাস্ত্র মতে করেছে। বিতর্ক আছে সবেতেই। তবুও ফিরবার সময় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যেতে আবেগ ধরা দিচ্ছে। প্রতিবার মা তুমি দুগ্গা দুগ্গা করে বলো। এবারও বলো মা, আবার ফিরে আসি বছর খানেক পরে আমার সোনার বাংলায় বাপের ঘরে।
মা গো, সমস্ত সুখ পেয়েছি আমি। শ্বশুর ঘরে শিবের মতো স্বামী। ছেলে-মেয়ে সবার জন্য মন খুশি নিয়ে থাকি। তোমাদের ফি বছর দেখতে আসি। তবুও ফিরে যাবার সময় তাকিয়ে দেখি ঠাকুর দালানের দিকে। আলপনা টানা দেওয়ালে চারটি দিন যত্ন করে রাখো আমাদের। কত কিছু খাবার খাওয়াও। মন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল শ্বশুর বাড়ির কথা। ইচ্ছে করছে সমস্ত কথা এখুনি ওকে গিয়ে বলি।
চল খোকা-খুকি এবার আমাদের ঘরে ফিরতে হবে। বাবা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে যে। মা আসলাম ভালো থেকো কেমন। শরীরের যত্ন নিও।
©-কল্যাণ অধিকারী
Comments
Post a Comment