দৃষ্টিহীন কবীর কিন্তু 'সুখী'


|🍁লজেন্স বিক্রি করে ওঁরা বিবেকবান পুরুষ🍁|

-কল্যাণ অধিকারী 

চোখের সামনে কিছু বিষয় থাকে যা সকলে এড়িয়ে যাই। এমনি একটি রোজনামচা সবার সামনে রাখলাম।

দ্যুতি পুর্কায়েত নামটা আমার আপনার সকলের কাছে অচেনা, আবার অনেক মানুষের কাছে পরিচিত। খুব সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন মেয়েটি। আমাদের সকলের কাছে রোজনামচা দৃশ্যটা মুঠোফোনে তুলে শেয়ার করেছে সোশ্যাল মিডিয়া'য়। ভাবছেন হয়ত এটা আবার নতুন কি! এমন রহ রাতদিন কেউ না কেউ কোন না কোন ভিডিও শেয়ার করে থাকে।

না ওস্তাদ না। 
সময় থাকলে দু মিনিট পড়ে দেখুন আশাকরি বোঝাতে পারবো।

লোকাল ট্রেনে ত্রিস্তর দেখা মেলে হকার বন্ধুদের। মচার চপ থেকে ফটাস জল, নদীয়ার বাদাম পাটালি হোক অথবা মচমচে পাঁপড় ভাজা সবকিছুই হয় যত্ন সহকারে বিক্রি। শিয়ালদা শাখার ট্রেনে কলার মোড়া জামা পরা কয়েকজন মানুষের সঙ্গে ওঁর দেখা। কবির হোসেন।বীরভূম জেলার বাসিন্দা। ওঁদের ছাপোষা চাউনিতে রয়েছে মায়াবী রেখা। তবে, চোখ থাকলেও নেই তাতে দৃষ্টি শক্তি। হাত পেতে ভিক্ষা করবার সহজ অবলম্বন কে দূরে সরিয়ে রেখেছে। খুচরো পয়সার বিনিময়ে লজেন্স বিক্রি করছে। কিনলে ভাগের মা গঙ্গা পেলেও পেতে পারে।

তবুও কেন নেবে? ছেলেগুলো যে অন্ধ।

খোকাবাবু বায়না করলেও হৃদকোষে সম্মান আটকানো পিতা উম মোটেও না। একপ্রকার চোখেমুখে বিরক্তি। যে দেশে অজুহাত সহজেই দেওয়া যায়। অভিনয় করলে খুচরো পয়সা মিলে যায়। বুজরুকি করলে বাপজি হওয়া যায়। সেখানে খেটে খেলেও শুধুমাত্র অন্ধ হওয়ায় নাক সিঁটকানো ব্যপার। এই অবধি না হয় বোঝা গেছে কিন্তু বাকিটা কি? 


কবির হোসেন

এ সমাজে টাকা খরচ করতে হয় সুখ পাবার লক্ষ্যে। লড়াই করতে হয় সুপ্ত অক্সিজেন মিলতে। সংসারে ভগবানকে পেতে ভোগ চড়াতে হয় ইষ্ট দেবতার চরণে। সেখানে একজন অন্ধ মানুষ বলছেন আমি 'সুখি'। হ্যাঁ এই শব্দ টা ওই অন্ধ নামক কোটায় আটকানো মানুষের মুখ থেকে বের করেছে মেয়েটি। এ শহরে মানসিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলা মানুষ দের প্রতিবন্ধী কার্ড পেতে বেশ খানিকটা ঝামেলা ঝক্কি পোহাতে হয়। ওরা খেটে খাচ্ছে তবুও লজেন্স কিনুন। দু টাকা খরচ করে কিনলে ওদের মুখে হাঁসি ফোঁটে বইকি। এতে আপনার তো রাজস্ব চলে যাচ্ছে না।

টিভির পর্দায় সেই এক কথা তেল মে মিলাবত! হ্যাঁ এখন একটু কমে গেছে বিজ্ঞাপন টি। অনেকে বলছে ওর প্রোডাক্টে কিছু মিলাবত পেয়েছে! সে যাইহোক। দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ঘোটালা। সেখানে মিলাবত মুক্ত কতদিন। লুঠেরা ঘুরছে সর্বত্র। ধর্মের জিগির তুলে কিছু কামিয়ে নেবার চেষ্টাও করছে কেউ কেউ। তবুও প্রতিবন্ধকতাকে নিয়ে লড়াই চালানো মানুষের পাশে থাকুন। দক্ষিণে যারা ট্রেনে সফর করেছেন এ দৃশ্য হামেশাই দেখেছেন। ওদের ওখানে হাত পাতার ব্যপার নেই। খেটে খেতে জানে। এখানেও প্রচলিত রীতি থেকে সরে আসছে শহর। শারীরিক প্রতিকূলতা কে পিছনে সরিয়ে এগিয়ে যাবার পথ দেখছে ওঁরা।

হাত দেখে ভাগ্য যাচাইয়ের অছিলায়, ভঙ্গিমা করে টাকা পয়সা আদায় করছে যারা তাদের দূরে রাখুন। প্রতিকূলতা নিয়েও লড়াই করা মানুষদের পাশে থাকুন। একশো দুশো নয় দুটাকা দিয়ে লজেন্স কিনলেই হবে। ওরা অল্পতেই খুশি এটা একটু মাথায় রাখবেন। ওঁদের কে একটু সুস্থ পরিবেশ দেবেন। বাকিটা নির্লিপ্ত ভালোবাসা।

©-কল্যাণ অধিকারী 

চিত্র দ্যুতি পুর্কায়েত এর পেজ থেকে নেওয়া।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য