তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা



|স্ক্যানারে 'সিবিআই' ব্যপারটা বেশ গা ছমছমে|
-কল্যাণ অধিকারী
ঝকঝকে পোশাকে দুঁদে অফিসার নিশানা কঠিন। প্রতি হাতে সূত্র। তদন্তের ব্যপ্তি বিশাল। শিরা-উপশিরা জুড়ে আকুন্ঠ বিশালতা। খবরের কাগজের পাতায় তদন্তে গতি বাড়াচ্ছে জাতীয় খবর। বয়ান রেকর্ড, বিশেষ আদালত, বহু পাতার চার্জশিট। বাকিটা ?
এ রাজ্যের মানুষ সিবিআই বলতে মূলত বৃহৎ একটি স্ক্যানারে তদন্ত বলতেই মনে করে। সারদা কর্তা ও রোজভ্যালি সহ একাধিক বে-আইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে বিশালাকার তদন্ত। প্রভাবশালী নেতা তত্ত্ব। বিতর্কিত সেই ফাগুন বউ শুভ্রা কুন্ডু। গ্রেফতারের পর রাজনৈতিক নেতা তাপস পালকে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বর। মদন মিত্র হাসপাতালে ভর্তি। ১৩৬ দিন পর অবশেষে জামিনে মুক্ত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ চাতুর্যপূর্ণ।
এখানেই শেষ নয়। সেই সিঙ্গুর, সেই টাটা মোটরসের জমিতে অর্ধদগ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা তাপসী মালিকের দেহ। সিবিআই তদন্তে গ্রেফতার হয় সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য সুহৃদ দত্ত সহ দেবু মালিক। তারপর! নেতাই গণহত্যা। সিবিআই নজরে সিপিএম নেতা ডালিম পাণ্ডে ও অনুজ পাণ্ডে। দীর্ঘ তিন বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুজ পাণ্ডে। ফাঁসি তো দূর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়নি।
রাজ্যবাসী সিবিআই মানে ওই সমস্ত কথাই মনে করে। বুক বেঁধে ছিল একসময়। সারদা ও রোজভ্যালি কান্ডের তদন্ত শেষ করে টাকা ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হবে! কুনাল ঘোষ, মদন মিত্র, তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক নেতা গ্রেফতার। আরপর! জল মাপা হয়েছে ভাগীরথীতে। আর কি সকলেই এখন জামিনে মুক্ত। ফিরেও এসেছেন স্বাভাবিক ছন্দে। কি দোষ এনাদের! কি হবে তদন্তের গতিপ্রকৃতি! তবে সান্ত্বনা এটুকুই যে তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলছে। মাঝেমাঝে খবরে চলে আসে তদন্তের গতি বেড়েছে। সেই কবে থেকে মানুষ বুক বেঁধে রয়েছে। এবার গ্রামবাংলার মানুষ গুলো প্রশ্নচিহ্ন তুলছে আদৌ টাকা ফেরত পাবে তো?



স্মৃতি তে উজ্জ্বল ২০০৭ সালের সেই নন্দীগ্রামের গণহত্যা। গায়ে কাঁটা দেওয়া ঘটনা। জননী ইটভাটা। বন্দুকের গুলির ঠাঁই ঠাঁই শব্দ। খালের জলে ভেসে যাচ্ছে ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি ও গ্রামবাসী দের লাল রক্ত। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তবে নন্দীগ্রামের মানুষ মেনে নিতে পারেনি সেই রিপোর্ট! মন ভেঙে গিয়েছিল সেইদিন। এখনও বিচার চাইছে তবে নিভৃতে। রিক্ত চোখে আজও তাকিয়ে থাকে ধর্ষিতা। পথে নামা বুদ্ধিজীবী সব চুপ। সেদিনের ঘটনা স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়েছে অনেকের।
একসময় ইডি কর্তার সঙ্গে রোজভালির প্রধান গৌতম কুণ্ডুর ফাগুন বউ শুভ্রা কুন্ডুর ঘনিষ্ঠতার বিষয় চায়ে পে চর্চা এনে দিয়েছিল। যদিও মনোজ কুমার ওসব ঘটনা অতীত। এখন তো সিবিআই এর ঘরে গৃহযুদ্ধ। অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানা ছুটিতে। নেতারা গরমাগরম কথা বলছেন। যে আঙুর না পারে পারতে সে টক বলবেই। কংগ্রেস সভাপতি এখন যা বলছেন, একসময় বিরোধীরা সেটাই বলেছে। যে যায় মুলুকে খেলার পাশা তার হাতেই। কংগ্রেস তাদের জমানায় ভালোই মাছ তুলেছে এখন যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা। যারপরনাই সম্মানে বাকিদের উপরে। মানুষ চাইবে এমন সংস্থা কাজ করবে স্বাধীন ভাবে। কোন রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে না। তদন্তে উঠে আসবে সঠিক তথ্য। ছাড় পাবে না কোন রাঘববোয়াল। আদপে ওই সংস্থা এখন খবরের হেডলাইন। কি এমন খুঁজে পাওয়া গেল যে কারণে অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানা কে যেতে হলো ছুটিতে। মানুষ জানতে চায়। মন থেকে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে চায়। আম জনতার কাছে সিবিআই নামক সংস্থার সম্মান আবারও প্রতিষ্ঠিত হোক।
বিরুদ্ধাচরণ করা মানেই তাকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত বা ছুটিতে পাঠানো কতটা যুক্তিপূর্ণ ভেবে দেখাটা জরুরি। যেহেতু বিষয় টি দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে। যা এখন জাতীয় শুধু নয় বিশ্বের দরবারেও পৌঁছে গিয়েছে। এমত অবস্থায় উচিৎ হবে সাম্য বজায় রাখা। আপামর জনগণের কথা মাথায় রেখে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা মানুষ জনের আস্থা অর্জন করা। বিতর্ক বইছে, ঝড় উঠেছে, তবুও শেষ বিচারের জন্য ওই সিবিআই কে নিরপেক্ষ ভেবে চলে দেশ। রাজনৈতিক দলের উচিৎ স্বশাসিত সংস্থা কে সুস্থ ভাবে কাজ করতে দেওয়া। তাদের উপর পভাব না ফলিয়ে সঠিক তদন্ত করতে দেওয়া।
©-কল্যাণ অধিকারী

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য