২৬/১১ ডাইরি

২৬/১১ সবথেকে মর্মান্তিক চিত্র 

হোটেল তাজ-এর জানালার ওপার থেকে হৃদয়ের আত্ম চিৎকার "বাঁচাও বাঁচাও"

-কল্যাণ অধিকারী
দেশজুড়ে আজ এক নভেম্বর বিপ্লব। আরব সাগরের পাড়ে খানিক দীর্ঘ এক সন্ধ্যের রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। ঠাঁই-ঠাঁই আওয়াজে গুলির লড়াই আজ ফিকে। রক্তের ছিটে দেওয়া একের পর মৃত্যু অহংকারী মুম্বই মুছে ফেলেছে। বিজ্ঞাপন সরিয়ে টেলিভিশনের নিউজে সেদিনকার লাইভ এখন স্পেশাল স্টোরি। শুধু থেকে গেছে ছত্রপতি শিবাজী রেলওয়ে টার্মিনাল, নরিম্যান হাউজ, পুরনো তাজ হোটেল প্যালেস এর বুকফাটা হাহাকার।
দশ বছর পরে আরও এক ২৬/১১। সকাল থেকে হাজির ওবি ভ্যান নিউজের লাইভ। সাংবাদিক দের মধ্যে কেউ স্মৃতিচারণ করছে। কেউ আবার নতুন তথ্য তুলে ধরবার প্রচেষ্টায়। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় আমরা ভরিয়ে দিচ্ছি ক্ষতের স্মৃতি। একটা আজমল কাসেভ বাকিটা আর্থার রোড জেল, কোটি-কোটি খরচ করে চার বছর পোষা। শেষমেশ পুনে ইয়েরওয়াড়া নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে লটকে দেওয়া। আজও কতটা বদলাতে পারলো বধ্য ভূমি পাকিস্তান ? বিশ্ব হয়তো এটুকু বোঝান গেছে সন্ত্রাসের ঘাঁটি পাকিস্তানের মাটি!


নভেম্বর জুড়ে আরব সাগরে শীতল হাওয়ার উপস্থিতি। দিনের শেষে কয়েক কোটি মানুষের ব্যস্ততায় হালকা প্রলেপ। দেশজুড়ে মন্দির-মসজিদ দু ইয়ের রাজনৈতিক টানাটানি। তবুও একটি রাজ্যের বাকি একটি পরগনা থেকে যায় এসবের আড়ালে। সমগ্র দেশের সন্ধ্যে এখানে নামে ৯টার পরে। টেলিভিশনে মেট্রো লাইভ শুরু হয় রাত সাড়ে এগারোটায়। শেষ ট্রেনে অফিস ফেরত মহিলাদের অহংকারী ভিড়। সকালের পেপার রাতে চোখ বুলিয়ে বুঝে নেয় সমুদ্র নগরীর ১৬৪ মানুষের মায়াময় ইতিকথা।
ভোরের আজান, সকালের মন্ত্রপাঠ, গঙ্গা স্নান। চলতে শুরু করা ট্রেন বাড়তে থাকা ভিড়। চটকে দেওয়া ভাত খাওয়া ভরপুর পেটে চুলচেরা আলোচনায় ২৬/১১। চায়ের কাপ কড়া করে কেউ চুমুক দেয় আলোচনায়। কেউ আবার চা তেতো করে দেয় যুক্তির মাধ্যমে। যে দেশে মানুষের রুটি রুজিতে প্রবেশ করে রাজনীতি। এটিএম মেশিনে ট্রানজেকশন শেষে বার কয়েক উল্টো পাল্টা সুইচ টিপে দিলেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারবে না ভেবে নেয়। আমরা বাঙালি তো নিজেরাই নিজেদের সিকিওরিটি বুঝে নিই। কোনওটা সাফল্য পায় বাকিগুলো আড়ালে আবডালে মুখ টিপে হাসে।


একটা আজমল কাসভকে ফাঁসি তে লটকে পড়শি দেশের অপরাধীদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে ভেবে নেওয়া টা যথার্থ নয় ! সীমানার ওপার থেকে প্রায় নিয়ম করে গোলাগুলি ছুঁড়ে চলেছে। ওরা বর্বর। মৃত্যুপুরী থেকে উঠে আসা নরকের কীট। রক্তের দাগ দেখলে আনন্দে মাতোয়ারা করে। আর আমাদের পরিচয় আমরা ভারতীয়। যেখানে খেলে বেড়ায় মেরি কম। রবিঠাকুরের কবিতায় চড়ে ছোটদের শৈশবের দিন এগোয়। রাতের ফাঁকা প্লাটফর্মে খালি গায়ে কষ্ট আঁকড়ে সভ্য মানুষ হয়ে শুয়ে থাকে ভবঘুরে। জীবন্ত আজও কালাম স্যরের প্রতিটি কথা।
©-কল্যাণ অধিকারী
 গুগল থেকে পাওয়া।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য