সিঁড়ি বেয়ে বয়ে যাওয়া জোছনায় দুই মেয়ে দ্বিতীয় পর্ব,,,




|বাইরে দু'জোড়া জুতো, ভিতরে ওদের দেহ-মনের উষ্ণতা'র উপস্থিতি|

-কল্যাণ অধিকারী

টিনা ও তৃষ্ণা রাতে দেহ ও মনের সম্পর্কের জেরে মানসিকভাবে বিপৰ্যস্ত হয়ে পরে প্রীয়া। বেলায় রান্না মাসি স্নান সেরে নিতে ডাক দিতে ই বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে দেখে ওরা নেই। এগিয়ে রান্না মাসির কাছে পৌঁছাতেই, উঠেছ মেয়ে৷ আচ্ছা তুমি স্নান সেরে এসো আমি খাবার বেরে দেব। বাথরুমে ছিটকিনি তুলে শাওয়ার খুলতেই ধেয়ে আসে ঠান্ডা একতোড়া জল। কইরে প্রীয়া জল গরম হয়ে গেল যে। আয় মা স্নান সেরে নে এবার। বাবা এসে যাবে এখুনি। গরম ভাত বাটা মাছের ঝাল দিয়ে খেয়ে নিবি। রান্না ঘরে একগাদা বাসন পড়ে আছে আমি ঝপ করে মেজে নিই! মায়ের কথা, বাড়ির কথা চোখের সামনে ভাসছে। এদিকে গা ভেসে যাচ্ছে ঠান্ডা জলের বিন্দু মেখে। শ্যামাঙ্গিনী প্রীয়া এসবের তোয়াক্কা না করেই গায়ে গলায় শাওয়ারের মহুয়া দানায় ভিজিয়ে চলেছে।


গা মুছে রুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। গায়ে জলের ছিটে লেগে থাকা শ্যামাঙ্গিনী প্রীয়া আজ ফুটফুটে যুবতী। চুলগুলো মেলে রয়েছে গায়ে। দু'কানের পাতায় ছোট পাথরের ট্যাঁপ কানের ঠিক করে নেয়। গায়ে পানাফুল রঙের চুড়িদার। খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ে। শহরের প্রথম আলো দেখবার ইচ্ছে সঙ্গে ইন্টারভিউ। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে যাদবপুর এলাকার অবিন্যস্ত বাড়ি। কিছুটা এগিয়ে সল্টলেকের বাসে ওঠে। গা ঘেঁষা ভিড় বাস। এভাবে ভিড় বাসে উঠে কলেজ জীবনের তিন বছর পার করেছে। সেই সময় বান্ধবীদের দেখেছে বাইকের পিছনের সিটে বসে সামনের শরীর এঁটে যেতে। তবে, এসবের থেকে অনেক দূরে থেকেছে শ্যামাঙ্গিনী প্রীয়া।
নলবন মুখ ঘুরিয়ে কলেজ মোড় পৌঁছাতে নেমে পড়ে। কাগজের ঠিকানা দেখে অফিসের পাঁচ তলায় পৌঁছে যায়। সামনের হেলান চেয়ারে তিনজন টাই পড়া কলার মোড়া সাদা ত্বকের মানুষ। হাতে তুলে দেয় প্রীয়া'র জীবনের নম্বরের ফাইল। কিছু প্রশ্নের ঝাল লঙ্কা ওর মাথার তেলোয় পৌঁছে যায়। দিনের আলো নিভবার আগেই মিলে যায় চাকরিটা পাক্কা হয়ে যাবার খুশি। উপর থেকে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। দূরে স্ট্রিট আলো জ্বলছে। তখনি একজনের উপস্থিতি। মিস্টার শেখর আপনাকে কেবিনে ডাকছেন। দরজার অন্তরালে ইয়া বড়ো কেবিন। একপলকে দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। এত সুন্দর রুম। 'প্রীয়া' এ শহরে চাকরি পাওয়ার থেকে চাকরি রাখাটা বড্ড কঠিন। তুমি এবার থেকে এই কেবিনের ওই যে চেয়ারে আছে এখানেই বসবে। কপোত শব্দে উনি বলে চলেন কথাগুলি। পরমুহূর্তে কাঁধে হাত রাখেন মিস্টার। ক্রমশ পিঠে হাত বোলাতে থাকেন। সঞ্চারিত হাত তখন হায়না হতে চায়।


আলপনা দেওয়া উঠোনে দাঁড়িয়ে ইতুপূজা করে আসা মায়ের আদরে বড়ো হয়েছে। বাসে উঠে কলেজ গেলেও গায়ে আঁচড় লাগায় নি। অথচ আজ মনে হচ্ছে, কেউ কড়িকাঠুরের জঙ্গলের আগে মেঠো পথে চলাচল করছে। গোটা পিঠ জুড়ে সাঁওতাল পরগনা জেলার মাটির দাগ মুছে দিচ্ছে। শরীর ধরে রাখা বেড়ায় হুক খোঁজবার চেষ্টা। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে এই পিঠে মায়ের তেল মাখানো হাতের ছাপ, আর বাবার শাসনের চিহ্ন রয়েছে। ততক্ষণে ওঁনার হাতের ঘোরাফেরা পিঠের নিম্নাংশের অবকাঠামোগত শিল্পনৈপূন্য ছোঁয়ার চেষ্টায়।
ঝটকে সরে, স্যর আমি কি কাল সকালে! ওহ হ্যাঁ কাল সকাল দশটায় চলে আসবে। লিফটের বদলে সিঁড়ি বয়ে নেমে আসতে থাকে। হালকা শীতের কামনায় মোহময় রাতের অপেক্ষায় শহর। জীবিকার রঙ্গমঞ্চে পয়লার কামার্ত কামড়ানি দিয়েছে। গোটা পথে এ কথা বাজছে কানে। রুমের বাইরে দু জোড়া জুতো। বুঝতে অসুবিধা হয়নি ভিতরে ওদের দেহ-মনের উপস্থিতি। দরজায় হালকা ঠেলা দিতেই এক বিছানায় দু'জনে। এই তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ? চাকরিতে জয়েন্ট তো কোথাও করতে হবে! তারি প্রক্রিয়া চলছে। রাতের খাবার খেয়ে উঠে রুম মুখো হবার আগে রান্না মাসি হাত ধরে ডাকে। তুমি ওদের থেকে দূরে থাকবে।


রুমে ফিরে আসে। কম্বলে মাথা গলিয়ে দেওয়া ঠান্ডা না হলেও চাদরের একাংশ গায়ে জড়িয়েছে। শরীরের উপরের অংশ খোলা বিদুষী দুই কন্যে মোবাইলে একের পর এক নীল পাতা খুলে চলেছে। হয়তোবা মনের আনন্দ দেহ ও শরীরে দেবার চেষ্টায়! কালো আকাশে মিটিমিটি তারা জিও কে ঠেলে দিচ্ছে মোবাইলে। তৃষ্ণা দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কাটছে। পাশে শুয়ে টিনা মাথার চুলে ঘনঘন হাত বোলাচ্ছে। বাইরে স্তব্ধ রাত ভেদ করে গাড়ির হেডলাইট দেওয়াল ছুঁয়ে যাচ্ছে। কখন যে দু'পাতা এক হয়ে গেছে মনে নেই।
সকালে ঘড়ির কাটা দশটায় টোকা দেবার আগেই প্রীয়া কেবিনের দরজায় হালকা ঠেলা দিতেই, ও এসে গেছ। বসো ওই চেয়ারে। লকটা করে দিচ্ছি আমি। পাশ কাটিয়ে যাবার অছিলায় কনুইয়ের ছোঁয়া ঠিকিয়ে,,,,

©-কল্যাণ অধিকারী

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য