শোভনকে নিয়ে গেরুয়া জল্পনা




আগামীর প্রস্তুতি নিয়েই কি মন্ত্রীপদে ইস্তফা ?


-কল্যাণ অধিকারী

জেড প্লাস থেকে কমিয়ে জেড এবার তাও থাকলো না। মাসটাও বৈশাখ নয় যে হাটু জল থাকে। তবুও আজ মন্ত্রীহিন শোভন চট্টোপাধ্যায় রাত কাটাবেন। সান্ত্বনা শুধু মেয়রের চেয়ার। সূর্য উঠলে তাও হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। 

শোভন দার থেকে আমি জীবন বোধ, মূল্য বোধ শিখেছি। স্পষ্ট জবাব বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। হতে পারে এমন এক কঠিন সময়ে পাশে থাকার বার্তা। বরাবর বলে আসেন যেটা আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি জানিয়েছেন শোভন দা তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। যদিও কানাঘুষো বড্ড কাছের বন্ধু না হলে সাত সাগর তেরো নদী পার করে যাওয়া যায় আমেরিকায়।

দলের পক্ষ থেকে তার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। তার উপর থেকে দল হাত তুলে নিয়েছে। শোভন বুঝেছে দলে তার প্রয়োজন শেষ। তাহলে কি করবেন একদা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল সভাপতি পদে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায়? বন্ধুকে পাশে নিয়ে রাজনীতি কে ইতি টানবেন! নাহলে গেরুয়া দলে নাম লেখাতে হবে। তবে শেষের টি কঠিন। নারদে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে শোভন বাবুর। বিজেপি তাকে নেবার আগে দলের কথাটাও ভাববে।

কলকাতা পুরসভায় মেয়র পদে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহভাজন হয়েই মেয়র হন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বেহালা পূর্বে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জিতে মন্ত্রী পরিষদে স্থান পান। দমকলের মতো দফতরের মন্ত্রী হন। চড়তে থাকে পারদ। কল্পিত সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে হাসিমুখে মন্ত্রী তথা মেয়র। আবাসন ও পরিবেশ দপ্তরের ক্ষমতাও চলে আসে শোভনের ঝুলিতে। পেয়ে যান আমেরিকা থেকে ডিলিট। তারপর!

বান্ধবী বৈশাখী ছোঁয়া সুদূর আমেরিকা তে পৌঁছে যাওয়ায় শুরু হয় জল্পনা। দাম্পত্য লড়াই ঘরের চার দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আদালতে পৌঁছে যায়। বিব্রত হয় শাসক দল তৃণমূল। তখনও বোধহয় শেষ পেরেক পোতা বাকি ছিল। জাগো বাংলা’র বার্ষিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ বহু ক্যাবিনেট মন্ত্রী থাকলেও ছিলেন না মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরে জানা যায় বৈশাখী কে নিয়ে শপিং করতে ব্যস্ত ছিলেন। নেত্রী রাগ করলেও বরাবরের মতো মুচমুচে প্রেমে মগ্ন শোভন।

একসময় মেয়রকে শোধরাতে বলেছিলেন। শুধুই প্রেম করছিস, নাকি কাজও করছিস। এসব কথাও বলেছিলেন নেত্রী। শোভনের থেকে কানন নামেই যে বেশি অভ্যস্ত ছিলেন। তবুও শোভন বৈশাখী কে কাছ ছাড়া করেন নি। যা নিয়ে ট্রেনে-বাসে, পাড়ার মোড়ে, সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে একাধিক রগরগে গল্প। কেউ তো লায়লা মজনুর প্রেম বলেও ইতিহাস কে টেনে এনেছেন। তবে এবার প্রশ্ন শোভনের ভবিষ্যৎ কি? অনেকে বলছেন দলত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু দলত্যাগ করার মতো পরবর্তী ভুল কি করবেন শোভন চট্টোপাধ্যায়!

সূত্রের খবর, আগামীর প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন শোভন। তাঁকে খুব শিগ্রী দিল্লিতে দেখা যেতে পারে! হয়তোবা এই সুযোগ টাকে কাজে লাগাতে চাইবে বঙ্গ বিজেপি। সেইমত গেরুয়া শিবিরে যাচ্ছেন। তবে একা নয় সঙ্গে বৈশাখী! কারণ অনেক আগে থেকেই বৈশাখী কে ওয়েরকুপার রাজ্য কমিটি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। তাছাড়া শোভনের থেকে দল সরে গিয়ে মহেশতলায় উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয় মেয়রের শ্বশুর দুলাল দাসকে। জিতেও যান। এসবের মানে তখন থেকেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে শোভনের কাছে।

সামনে ১৯ এর রণাঙ্গন। তার আগে শোভন চট্টোপাধ্যায় কে সাজা দিয়ে দলকে ঝাকুনি দিয়ে দিলেন নেত্রী। গোষ্ঠী দ্বন্দ এবং পরকীয়া বা অসমর্থিত কাজে দল পাশে থাকবে না। প্রিয় কানন হোক বা অন্য কেউ। কাজ করলে সুপাত্র নইলে দলের নিশানায় পড়তে হবে। সরিয়ে দিতেও নেত্রী দু মিনিট সময় নেবেন না।

©-কল্যাণ অধিকারী

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য