ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণ


ইসলামাবাদ কে কারগিল স্মরণ ও বেজিং কে স্পষ্ট ইঙ্গিত |
কল্যাণ অধিকারী
দেশ আবারও যুদ্ধ বিমানে আক্রমণ শানালো। পড়শি দেশে জন্মানো জঙ্গি শিবির ধ্বংস করতে 'মিরাজ' যুদ্ধ বিমানের অভাবনীয় সাফল্য। আকাশলীনা সাঙ্গ করে, জঙ্গিশিবির ধংস করে ভোররাতে ফিরে আসলো আপন ডেরায় 'মিরাজ'। শুভ মঙ্গলেই অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণ একদিকে ইসলামাবাদ কে কারগিল স্মরণ করালো। অপরদিকে বেজিং কে দেওয়া হল স্পষ্ট ইঙ্গিত।
উরি সেনা ছাউনির পর, পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা। পাকিস্তানে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি ডেরা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গি ভারতে একের পর এক হামলা চালিয়েছে। শহীদ হয়েছে বহু সেনাকর্মী। শুধুমাত্র যুক্ত থাকার প্রমাণ চেয়ে নিজেদের উপর থেকে দোষ কমাবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসলামাবাদ। অনেক হয়েছে তথ্য প্রমাণ চালাচালি। এবার আক্রমণ তাও 'মিরাজ' কে দিয়ে।
শান্তি আলোচনা, বৈঠক, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের আশ্বাস বহুবার দিয়েছে পাকিস্তান। ক'দিন পর যেই কে সেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনদিন অংশগ্রহণ করবে না পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী বদল হয়ে পাঠান পুত্র আসলেও পূর্বের অবস্থানে অবিচল একটা দেশ। কাশ্মীর কে সামনে রেখে জঙ্গি আন্দোলনকে গোপনে মদত দিয়ে চলেছে। যার জেরে শহীদ হয়েছে ভারতের একাধিক সেনা।
অধিকৃত কাশ্মীর কে হাতিয়ার করে পাকিস্তানিদের ভড়কে দেবার সুচারু কাজটা বহুদিন ধরে শুরু করেছে বেজিং। ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গিরা বেয়াব্রু লড়াই জারি রাখলে পাকিস্তান বেশি করে চীন নির্ভর হয়ে পরবে। সেক্ষেত্রে লাভবান হবে বেজিং। ঋণ-এর ফাঁদে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে যাবে পাকিস্তান। বাধ্য হবে পাকিস্তানে ব্যবসা করবার ছাড়পত্র দেবার। সেই সঙ্গে ভারত মহাসাগর জুড়ে দাদাগিরি করবার সুযোগ আরও বেশি করে পাবে। এমনটা সকলের জানা।

মঙ্গলবার ভোররাতে হামলা চালানো হতে পারে তা কিছুটা আন্দাজ করেছিল কূটনৈতিক মহল। সোমবার বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের উদ্বোধন করেছেন। সেখানে শহীদদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বদলা নেবার যে সময় উপনীত তা মঙ্গলবার ভোররাতের হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে। কি ক্ষতি হয়েছে সেটা পরের কথা। তবে পাকিস্তানের উপর কঠিন জবাব দেওয়া যে শুরু তা সকালের ব্রেকিং জানান দিচ্ছে। পাকিস্তানে হামলা ও চীন কে উস্কানি দেওয়া বন্ধের একটা জোড়ালো জবাব দেওয়া দরকার ছিল।
এক ডজন যুদ্ধ বিমান নিয়ে হামলা করা আসলে ইসলামাবাদ কে সম্যক ধারণা প্রসন করা। অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বায়ুসেনা এক হাজার কিলোগ্রাম বোমাবর্ষণ করে অপারেশন চালানো সাম্প্রতিক কালে সেরা সাফল্য। একের পর এক জঙ্গিদের শিবির ধবংস হয়েছে। এত বড় মাপের জবাব দেওয়ায় জইশ-এর সিনিয়র জঙ্গি খতম হওয়াটাও আশ্চর্যের কিছু নয়। এবার লক্ষ্য পাকিস্তানের মাটিতে বহাল তবিয়তে থাকা জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার। রক্ত চেনা জঙ্গি গুরু কে নিকেশ করলে তবেই কমবে কাশ্মীরে হামলা।
ভারতবর্ষ বরাবর সহিষ্ণুতার দেশ। এ দেশে সকল ধর্মের বসবাস। তবুও পড়শি দেশে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি শিবির থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে কাশ্মীর কে রক্তাক্ত করছে জইশ-ই-মহম্মদের মতো একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী। যার জবাব এর আগে ৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ দেখিয়েছে। এবার দু দশক পর মঙ্গলবার ভোররাতে ১২টি 'মিরাজ' একত্রে হামলা চালায় অধিকৃত কাশ্মীরে। আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে যায় ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান 'মিরাজ'। প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে চলে বোমাবর্ষণ।


তারপর বালাকোট, চাকোটি এবং মুজফরাবাদ একাধিক জইশ-ই-মহম্মদের শিবির ও লঞ্চপ্যাড, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জইশের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩। ধ্বংস করা ভিডিও এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমগ্র অপারেশন করতে সময় লেগে যায় চল্লিশ মিনিট। আকাশনীল করে ফিরে আসে ১২ টি 'মিরাজ' যুদ্ধ বিমান।
ভারতীয় বায়ুসেনার অভাবনীয় সাফল্যে টুইট করেছেন একাধিক বিরোধী নেতা নেত্রী। যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
বহু চর্চিত 'রাফেল' আসবার আগে 'মিরাজ' এর এই সাফল্য দেশের নাম এভারেস্ট শিখরে নিয়ে গেল এ বিষয়ে একমত সকলে।
©-কল্যাণ অধিকারী
সামঞ্জস্যপূর্ণ চিত্র গুগল থেকে ।

Comments

Popular posts from this blog

গল্প যখন সত্যি তৃতীয় পর্ব

শরৎচন্দ্রের বাড়ি একদিনে'র গন্তব্য

শান্ত দামোদর, পাখিদের কলকাকলি, বাড়তি পাওনা ভারতচন্দ্রের কাব্যতথ্য